বিমান বাহিনীর নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যায় তাদের প্রশিক্ষণ যুদ্ধ বিমানটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনায় পতিত হয় এবং এ ঘটনায় বিমানটির একজন পাইলট মৃত্যু বরণ করেন। এর আগে ২০১৭ সালেও চট্টগ্রামের লোহাগড়ায় একই মডেলের আরেকটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছিলো। বিমানটি হলো ইয়াকভলেভ ইয়াক-১৩০, যা সংক্ষেপে ইয়াক-১৩০ নামে পরিচিত।
৯ই মে সকালে উড্ডয়নরত অবস্থায় আকাশে আগুন বিমানটিতে লাগলে দুইজন পাইলট প্যারাসুট দিয়ে বিমান থেকে নেমে এসেছিলেন। পরে তাদের উদ্ধার করে পতেঙ্গা বিএনএস হাসপাতালে নেয়া হয়।
চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই মারা যান দুই পাইলটের একজন স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ। অপর পাইলট উইং কমান্ডার মো. সোহান হাসান খান চিকিৎসাধীন আছেন।
কর্ণফুলী টাইমস এর কাছে ঢাকায় আইএসপিআর এর বিমান বাহিনী ডেস্ক কর্তৃক বিমানটির দুর্ঘটনায় পড়ার খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ জানাজা সম্পন্ন

প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ এর জানাজা চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বিমানবাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটি প্রাঙ্গণে সম্পন্ন হয়েছে।
উক্ত জানাজার নামাজে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সেনা, বিমান, নৌবাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন।
এসময় জাওয়াদের বাবা ডা. মো. আমান উল্লাহ জাতীয় পতাকায় জড়ানো জাওয়াদের মরদেহের সামনে অশ্রুসিক্ত চোখে সবার দোয়া কামনা করেন । জানাজা শেষে জাওয়াদের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার গোপালপুরে নেওয়া হচ্ছে।
বিধ্বস্ত বিমান উদ্ধার

দীর্ঘ ১০ ঘণ্টা পর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিধ্বস্ত বিমানটি উদ্ধার করেছে নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী জাহাজ ‘বলবান’।
৯ মে, বৃহস্পতিবার আনুমানিক রাত ৯টার দিকে বিধ্বস্ত বিমানটি উদ্ধার করা হয়।
এর আগে সন্ধ্যায় নৌবাহিনীর ডুবুরি দল নদীর তলদেশে বিমানটি শনাক্ত করে। কর্ণফুলী নদীতে বিধ্বস্তের পর থেকেই বিমানটির খোঁজে নামে নৌবাহিনী। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং ম্যানুয়াল পদ্ধতি দুটির ব্যবহার মাধ্যমে খোঁজা হয় বিধ্বস্ত বিমানটি।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিমানটি পরিদর্শনের পর বিমানবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে।
বিধ্বস্ত বিমানটি খুঁজে পেতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য বেশ কষ্টস্বাধ্য ছিল, কেননা ঘটনা স্থলটি কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় হওয়ায় নদীর তলদেশ ছিল মাত্রাতিরিক্ত গভীর। যেহেতু এটি চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ চলাচলের পথ সেহেতু বিমানটি শনাক্ত করতে বিলম্ব হলে এ পথে জাহাজ চলাচল ব্যহত হতো বলে জানিয়েছে নৌবাহিনী।
এর আগে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অবতরণের আগে বেলা ১১টার দিকে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানটিতে আগুন লেগে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় পড়ে। আইএসপিআর সূত্র মতে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমান বাহিনীর (YAK 130) প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
দুর্ঘটনার পর বৈমানিক স্কোয়াড্রন লিডার অসিম জাওয়াদ ও উইং কমান্ডার মো. সোহান হাসান খান প্যারাসুট দিয়ে জরুরি বিমান থেকে নদীতে অবতরণ করেন। বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী দল এবং স্থানীয় জেলেদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দুই বৈমানিককে উদ্ধার করা হয়।
পাইলটদের মধ্যে স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ অসিম জাওয়াদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য পতেঙ্গার বিএনএস হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ইয়াক- ১৩০ বিমান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

দ্যা ইয়াকভলেভ ইয়াক-১৩০ বিমানটি রাশিয়ায় তৈরি, এটি মূলত এ কমব্যাট প্রশিক্ষণ বিমান , যা সংক্ষেপে ওয়াইএকে বা ইয়াক-১৩০ নামে পরিচিতি লাভ করে।
যুদ্ধে এটি হালকা মাত্রায় ব্যবহারের উপযোগী হলেও দুই আসনের এই বিমানটি মূলত উচ্চতর প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত হয়। ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে এর প্রথম ফ্লাইট পরিচালনার আগে ইয়াক ১৩০টির মানোন্নয়ন করেছিল রাশিয়া। পরে দুই ইঞ্জিনের এই বিমানটি ২০১০ সালে রাশিয়ার বিমান বাহিনীতে সংযুক্ত হয় ।
স্পুটনিক নামক রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী প্রায় আটশ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ২০১৪ সালে রাশিয়ান ঋণ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ চব্বিশটি এ ধরণের প্রশিক্ষণ বিমানের অর্ডার দেয় রাশিয়াকে। চব্বিশটি অর্ডার দিলেও পরবর্তীতে অর্ডার কমিয়ে ষোলটি করা হয় বলে জানা যায় ।
২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে মূলত এই মডেলের প্রশিক্ষণ বিমান সংযুক্ত হয়। একই বছরের সেপ্টেম্বরে প্রথম ব্যাচে ছয়টি বিমান বাংলাদেশকে হস্তান্তর করে রাশিয়া।
রাশিয়া ক্রয়াদেশ অনুযায়ী ২০১৬ সাল নাগাদ সব বিমান বাংলাদেশকে সরবরাহ করে।
উক্ত সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী হালকা ওজনের হলেও এটি ছিল রাশিয়ার এডভান্সড মডেলের ফাইটার বিমান।
ইয়াকভলেভ ইয়াক-১৩০ মডেলের বিমানটি স্থল ভাগে হামলা কিংবা আকাশ থেকে আকাশে উৎপক্ষেপনযোগ্য অস্ত্র বহন করতে পারদর্শী।
রাশিয়ার কাছ থেকে এর আগে ১৯৯৯ সালে আটটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান কিনেছিলো তখনকার সরকার। ২০০১ সালে এ নিয়ে তৎকালীন সরকার প্রধানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। যেটি পরে ২০১০ সালে হাইকোর্ট কতৃক বাতিল করে দেয়।