২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য প্রায় আট লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবারের বাজেট ঘোষনার শিরোনাম- “সুখী,সমৃদ্ধ,উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার”।
সাধারণত প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সংসদে আলোচনার পর কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা হলেও বড় কোনো পরিবর্তন হয় না। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক নতুন বাজেটের উল্ল্যেখযোগ্য দিকগুলি।
আয়কর
বাজেটে সবার নজর থাকে আয়করের দিকে। যারা চাকুরীজীবি তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্তাবিত বাজেটে দেখা গেছে, করমুক্ত আয়ের সীমার কোন পরিবর্তন হয়নি।
করমুক্ত আয়ের সীমা | বিদ্যামান | প্রস্তাবিত |
সাধারণ করদাতা | ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা | অপরিবর্তিত |
মহিলা ও ৬৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী | ৪ লাখ টাকা | অপরিবর্তিত |
প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতা | ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা | অপরিবর্তিত |
গেজেটভূক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযুদ্ধা | ৫ লাখ টাকা | অপরিবর্তিত |
এবার করের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আসা হয়েছে। যাদের আয় বেশি তাদের বেশি আয়কর দিতে হবে।
এবারের বাজেটে সর্বোচ্চ করের হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ শতাংশ। যাদের মোট বার্ষিক আয় ৩৮ লাখ ৫৬০ হাজার টাকার বেশি তাদের জন্য ৩০ শতাংশ আয়কর প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ আয় ৩৮ লাখ ৫৬০ হাজার টাকার বেশি হলে সে আয়ের উপর ৩০ শতাংশ কর দিতে হবো।
প্রস্তাবিত করের ধাপ | প্রস্তাবিত করের হার |
৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত | শূন্য |
পরবর্তী ১০০০০০ টাকার উপর | ৫% |
পরবর্তী ৩০০০০০ টাকার উপর | ১০% |
পরবর্তী ৪০০০০০ টাকার উপর | ১৫% |
পরবর্তী ৫০০০০০ টাকার উপর | ২০% |
পরবর্তী ২০০০০০০ টাকার উপর | ২৫% |
অবশিষ্ট টাকার উপর | ৩০% |
রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেট
একটি বাজেটের দুটি অংশ থাকে। একটি অংশ রাজস্ব বাজেট এবং অন্যটি উন্নয়ন বাজেট। রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য সরকার প্রতি বছর বিভিন্ন ধরনের কর থেকে যে পরিমান অর্থ সংগ্রহ করে তাকে রাজস্ব বাজেট বলে।
প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটের মধ্যে রাজস্ব বাজেট ৫ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এই অর্থ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় ব্যয় করা হবে। যার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন বিষয়।
কোন খাতে বরাদ্দ সবচেয়ে বেশি?
সরকারের পেশ করা বাজেটে দেখা গেছে, সবচেয়ে ব্যয় হবে ঋণের সুদ পরিশোধে। ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেটের প্রায় ১৪.২ শতাংশ ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে, যার পরিমান ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে সবচেঙে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মোট বাজেটের ১৪ শতাংশ এ খাতে ব্যয় করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যার মোট পরিমান ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা।
বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি ও প্রণোদনার জন্য ব্যয় করা হবে মোট বাজেটের ১১.১ শতাংশ।
এছাড়া পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ১০.২ শতাংশ ব্যয় ধরা হয়েছেএ যার পরিমান ৮১ হাজার কোটি টাকার বেশি।
টাকা কোথা থেকে আসবে?
প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার রাজস্ব আয়ের লক্ষমাত্র নির্ধারণ করেছে পাচঁ লাখ একচল্লিশ হাজার কোটি টাকা। বাকি দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ধার করবে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি,বিভিন্ন ধরনের বন্ড বিক্রি এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া।
বিদেশী উৎস থেকে ঋণ ও অনুদান নেবে ৯৫ হাজার কোটি টাকা ওবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার মত। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর আদায় করবে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। সংগ্রহের পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে ভ্যাট, আমদানি শুল্ক, আয়কর ও সম্পূরক শুল্ক।
ব্যাংকে টাকা রাখলে খরচ বাড়বে
ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা থাকলে ৩ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। ব্যাংকে ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা থাকলে ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। ব্যাংকে ১ কোটি টাকা থেকে ২ কোটি টাকার মধ্যে থাকলে ১০,০০০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হবে। এছাড়া ২ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা হলে আবগারি শুল্ক হবে ২০ হাজার টাকা।
কমিউনিটি সেন্টার, মোবাইল ফোন
আপনি যদি কোনো কমিউনিটি সেন্টার বা কনভেনশন সেন্টারে বিয়ে, জন্মদিন বা কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করতে চান তাহলে আপনাকে আয়কর রিটার্ন দেখাতে হবে। আয়কর রিটার্নের প্রমান ছাড়া কমিউনিটি সেন্টারে কোন প্রকার অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে না।
বিদেশ থেকে আসার সময় একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুটি ব্যবহৃত ফোন সেট শুল্কমুক্ত আনতে পারবেন। এছাড়াও শুল্ক পরিশোধে তিনি একটি নতুন ফোন সেট আনতে পারবেন।
সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক
বাংলাদেশের সংসদ সদস্যরা এত বছর ধরে বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত গাড়ী আমদানি করে আসছেন। কিন্ত এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
সেক্ষেত্রে গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক ও ২৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।
তিনি তার বাজেট ঘোষনায় -সকল স্তরে কর ফাঁকির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে এবং সবাইকে রাজস্ব প্রদানে উৎসাহিত করা হয়েছে।