মোদি অন্যদের তুলনায় কত বেশি জনপ্রিয়? ২২৪ জন প্রার্থী জিতেছেন মোদির চেয়ে বড় ব্যবধানে!
আন্তর্জাতিক

মোদি অন্যদের তুলনায় কত বেশি জনপ্রিয়? ২২৪ জন প্রার্থী জিতেছেন মোদির চেয়ে বড় ব্যবধানে!

জুন ১২, ২০২৪

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করা গেলেও প্রতিটি বিশ্লষণের কেন্দ্রে রয়েছে নরেন্দ্র মোদি। তাঁর নামে এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেছিল বিজেপি। যদিও তিনি উত্তর প্রদেশের বারাণসী থেকে টানা তৃতীয়বারের মতো জয়ী হয়ে সংসদে একটি আসন পেয়েছেন,২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় মোদির প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান আগের বছরের তুলনায় কম।২০১৯ সালের নির্বাচনে তিনি ৪,৭৯,০০০ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন, যা এখন ১,৫২,০০০ ভোটে নেমে এসেছে।

নির্বাচন কমিশনের মতে, এই লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী অজয় রায় যিনি বারাণসীতে মোদীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, তিনি ৪৬০,৪৫৭ ভোট পেয়েছেন, যেখানে নরেন্দ্র মোদী ৬,১২,৯৭০ ভেট পেয়েছেন। এর পার্থ্ক্যটি লক্ষ্য করেও বিশ্লেষন করা যেতে পারে যে, ৫৪২ টি লোকসভা আসনের মধ্যে একটি আসনে বিজেপির মুকেশ কুমার চন্দ্রকান্ত দালাল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন, ২২৪ জন প্রার্থী প্রধানমন্ত্রী মোদীর চেয়েও বেশি ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।

মোদি বনাম বিরোধী প্রার্থীরা

এই ২২৪ টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১১২ টি আসনে অন্য দলের প্রার্থীরা বারাণসীতে মোদীর চেয়ে বেশি ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। একইভাবে ১১২ জন বিজেপি প্রার্থীও মোদির তুলনায় বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।

এদিকে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ৫২টি আসনে জিতলেও এবার কিন্তু সংখ্যাটি ৯৯ এ গিয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের নেতা রাহুল গান্ধী উত্তর প্রদেশের রায়বেরেলি এবং কেরালার ওয়ানাদ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন।

এই দুটি আসনেই রাহুল গান্ধী তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীতে তিন লাখেরও বেশি ভোটে পরাজিত করেছেন।

এই লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির থেকে বেশি ভোট পেয়েছেন এমন অনেক সুপরিচিত বিরোধী নেতা রয়েছেন।যারা বড় ব্যবধানে জিতেছেন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ভাগ্নে এবং তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অভিষেক ব্যানার্জি ডায়মন্ড হারবার আসনে ৭,১০,০০০ ভোটের ব্যাবধানে জয়ী হয়েছেন। একই তালীকায় রয়েছে ডিএমকে নেতা এম কে কানিমোঝি, এআইএমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসি, সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলশ যাদব, আম আদমি পার্টির নেতা গুরমিত সিং, জাতীয় কংগ্রেস পার্টির সুপ্রিয়া সুলে এবং কিছু সতন্ত্র প্রার্থী।

নরেন্দ্র মোদী বনাম বিজেপির অন্যান্য প্রার্থী

বিজেপির অভ্যন্তরে অসংখ্য নেতা মোদির চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন। এবং তাদের নিকটতম প্রতিযোগিদের চেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। এই তালিকায় ১১২ জন বিজেপি প্রার্থী রয়েছে।

এই নেতাদের মধ্যে সব চেয়ে আলোচিত নাম হল মধ্য প্রদেশের প্রাক্তন মূখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান, যিনি বিদিশা আসনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে ৮,২০,০০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন। আরেকজন বিশিষ্ট বিজেপি প্রার্থী অমিত শাহ গুজরাটের গান্ধীনগর লোকসভা আসনে ৭,৪৪,০০০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের গৌতমবুদ্ধ নগর আসনে মহেশ মর্মা ৫,৫৯,০০০ ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া মধ্যপ্রদেশের গুনা আসনে ৫,৪০,০০০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। গুজরাটের পোরবন্দরে তার প্রতিপক্ষকে ৩,৮৩,০০০ ভোটে পরাজিত করেছেন মনসুখ মান্ডাভিয়া। পীযুষ গোয়াল মহারাষ্ট্রের মুম্বাই উত্তর আসনে তার প্রতিপক্ষকে ৩,৫৭,০০০ ভোটে পরাজিত করে জিতেছেন। মেহা মালিনী উত্তর প্রদেশের মথুরা থেকে ২,৯৩,০০০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।

মোদি বনাম প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী

জহরলাল নেহেরু ছাড়া ভারতের আর কোন প্রধানমন্ত্রীপরপর তিনটি নির্বাচনে জয়ী হননি। ভারত এই পর্যন্ত ১৮ টি লোকসভা নির্বাচন করেছে এবং নরেন্দ্র মোদিসহ ১৪ জন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। জএহরলাল নেহেরুই একমাত্র নেতা যিনি পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রিরা গান্ধী প্রায় ১৬ বছর এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। মনমোহন সিং ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

ভারতের নির্বাচন কমিশনের মতে, নেহরু যখন তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তখন তিনি উত্তর প্রদেশের ফুলপুর লোকসভা আসনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে ৩৩.৪৫% ভোটে পরাজিত করেন। এখানে শতাংশের নিরিখে তুলনা করা হয়েছে কারণ মসয়ের সাথে সাথে ভোটার সংখ্যাও বেড়েছে। এর মানে নেহরুর সময়ে কেন্দ্র ভোটার সংখ্যা অনেক কম ছিল।

১৯৮০ সালে যখন ইন্দ্রিরা গান্ধী তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তখন অন্ধ্র প্রদেশের মেদক আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীতে ৪৯.৩৫% ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন।

বিজেপি নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ীও তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়া সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু নেহরু বা মোদির মতো পরপর তিনটি নির্বাচনে জয়ী হননি। বাজপেয়ী যখন তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তখন তিনি লখনউ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন এবং ১৬.৩৯% ভোটে জয়ী হন। পক্ষান্তরে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ১৩.৪৯% ব্যবধানে জয়ী হন।

যাইহোক, এই নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে বিজয়ী প্রার্থী হলেন কংগ্রেসের রাকিবুল হুসেন, যিনি কার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রটিক ফ্রন্টের বদরুদ্দিন আজমলকে আসামের ধুবরি আসনে ১০,১২,৪৭৬ ভোটে পরাজিত করেছেন।

নির্বাচনে একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো যে ইন্দোরে রানার আপ ছিল “NOTA” (None of the above)। এই আসনে কংগ্রেস প্রার্থীতাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। এটি দেশের একমাত্র নির্বাচনী এলাকা যেখানে ২,১৮,৬৪৭ জন লোক NOTA বেছে নিয়েছিল। একজন ভোটার EVM (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে NOTA বোতাম তখনই ব্যবহার করেন যখন তারা তাদের নির্বাচনী এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী প্রার্থীদের ভোট দিতে চান না। ইন্দোরে বিজয়ী প্রার্থী শঙ্কর লালওয়ানির NOTA এর চেয়ে ১০,০৮,০৭৭ ভোটের ব্যবধান ছিল।

যাইহোক, যদি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কথা বিবেচনা করা হয়, তাহলে এই আসনে বিজয়ী ব্যবধান ছিল ১১,৭৫,০৯২ ভোট, কারণ BSP এর সঞ্জয় সোলাঙ্কি ৫১,৬৫৯ ভোট পেয়েছে।

এই লোকসভা নির্বাচনে সবচেয়ে কম জয়ের ব্যবধান ছিল মুম্বাই উত্তর পশ্চিমে। শিবনসেনার রবীন্দ্র ওয়াইকার তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শিবসেনার (উদ্ধব ঠাকরে) অমল কীর্তিকারকে মাত্র ৪৮ ভোটে পরাজিত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *